Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষক পর্যায়ে গমবীজ উৎপাদন প্রযুক্তি

গম বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ দানাজাতীয় খাদ্যশস্য। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে ২০১৮-১৯ সালে ৩.২৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১১.৫০ লক্ষ টন গম উৎপাদিত হয়।  জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ফলে গমের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর প্রায় ৬০ লক্ষ টন গম বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গমের নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের ফলে ২০১৮-১৯ সালে দেশে গমের হেক্টরপ্রতি গড় ফলন বেড়ে ৩.৪৯ টনে উন্নীত হয়েছে। গমের আধুনিক জাত, উন্নতমানের বীজ, সময়মতো বপন, সুষম সার,  পরিমিত সেচ, ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে গমের জাতীয় গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪.০ টনে উন্নীত করা সম্ভব। বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়াও শুধু উন্নতমানের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমেই প্রায় ২০% ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব। চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে যন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করলে গমের মান সম্পন্ন বীজ উৎপাদন সহজতর হবে এবং গম চাষ আরো লাভজনক হবে। বর্তমানে বীজের চাহিদা প্রায় ৫০,০০০ টন। এর মধ্যে বিএডিসি ৪০% সরবরাহ করে এবং অবশিষ্ট ৬০% চাষি পর্যায়ে সংরক্ষিত বীজ থেকে জোগান দেয়া হয়। এঅবস্থায় মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও ব্যবহারের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
বীজ উৎপাদনের আধুনিক কলাকৌশল
জাত নির্বাচন : এ পর্যন্তÍ উদ্ভাবিত ৩৩টি উচ্চফলনশীল গম জাতের মধ্যে বারি গম- ২৫, বারি গম- ২৭, বারি গম- ২৮, বারি গম- ২৯, বারি গম- ৩০, বারি গম- ৩১, বারি গম- ৩২ ও বারি গম- ৩৩ কৃষক পর্যায়ে চাষের আওতায় রয়েছে। নতুন জাতগুলি উচ্চফলনশীল এবং রোগ প্রতিরোধী। এর মধ্যে বারি গম- ২৫ লবণাক্ততাসহিষ্ণু এবং বারি গম- ৩৩ জাতটি বøাস্ট রোগ প্রতিরোধী ও জিংক সমৃদ্ধ। বারি গম- ৩০ ও বারি গম- ৩২ জাত দুটি গমের বøাস্ট রোগে সহনশীল।
বপন সময় :
বীজের সঠিক আকার, আকৃতি, পুষ্টতা ও অন্যান্য গুণাগুণ বজায় রাখার জন্য উপযুক্ত সময়ে গম বপন করতে হবে। ভাল বীজের জন্য গম বপনের উপযুক্ত সময় নভেম্বর মাসের ১৫ থেকে ৩০ (অগ্রহায়ণ মাসের ১ম থেকে ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত) পর্যন্ত।
বীজের হার ও বীজ শোধন : বীজ গজানোর ক্ষমতা শতকরা ৮০ ভাগ বা তার বেশি হলে হেক্টরপ্রতি ১২০ কেজি বীজ ব্যবহার করতে হবে।  তবে বারি গম ৩৩ জাতের দানা বড় হওয়ায় কাক্সিক্ষত সংখ্যক গাছ পেতে হেক্টরপ্রতি ১৪০ কেজি বীজ বপন করতে হবে। বপনের পূর্বে বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করে নিতে হবে এবং কার্যকর ছত্রাকনাশক মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। এর ফলে বীজবাহিত রোগ দমন হয়, চারার সংখ্যা ২০-২৫% বৃদ্ধি পায় এবং ফলন শতকরা ১০-১২ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
বপন পদ্ধতি : সারিতে অথবা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে ২০ সেমি. দূরে দূরে সারি করে ৪-৫ সেমি. গভীরে বীজ বুনতে হবে। ধান কাটার পরপরই পাওয়ার টিলার চালিত বীজ বপন যন্ত্রের সাহায্যে স্বল্পতম সময়ে গম বোনা যায়। এ যন্ত্রের সাহায্যে একসঙ্গে জমি চাষ, সারিতে বীজ বপন ও মইয়ের কাজ হয়। সারিতে বপন করলে বিভিন্ন আন্তঃপরিচর্যা ও ভিন্ন জাতের গাছ বাছাই করা সহজ হয়।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ :  গম চাষে সুষম সার ব্যবহার প্রয়োগে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। জৈব সার প্রয়োগ করার পর দুই-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া এবং সম্পূর্ণ টিএসপি (ফসফেট), পটাশ, জিপসাম এবং বোরন সার শেষ চাষের পূর্বে জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে চাষ-মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
বপনের ১৭-২১ দিনের মধ্যে বা চারার তিন পাতা অবস্থায় প্রথম সেচের পর দুপুর বেলা মাটি ভেজা থাকা অবস্থায় হেক্টরপ্রতি ৭৫-৮৫ কেজি ইউরিয়া উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। জমিতে অ¤øীয় মাত্রা ৫.৫ এর কম হলে হেক্টরপ্রতি ১০০০ কেজি হারে ডলোচুন গম বপনের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে মাটিতে ‘জো’ থাকা অবস্থায় প্রয়োগ করতে হবে। ডলোচুন প্রয়োগে গমের ফলন ২০-২৫% বৃদ্ধি পায়। মাটিতে একবার ডলোচুন প্রয়োগ করলে তিন বছরে আর প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।
সেচ প্রয়োগ : ভালো বীজ উৎপাদনের জন্য পরিমিত সেচ দেওয়া প্রয়োজন। মাটির প্রকার ভেদে গম আবাদে ২-৩টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পর), দ্বিতীয় সেচ শীষ বের হওয়ার আগে (বপনের ৫০-৫৫ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের সময় (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) দিতে হবে। তবে শুষ্ক আবহাওয়ায় ভালো ফলনের জন্য অতিরিক্ত এক বা দুটি সেচ প্রয়োজন হতে পারে। প্রথম সেচটি খুবই হালকাভাবে দিতে হবে। তা না হলে অতিরিক্ত পানিতে চারার পাতা হলুদ হতে পারে বা চারা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেজন্য সেচের পরপরই জমি থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে। তাই বপনের পর জমির ঢাল বুঝে ২০-২৫ ফুট অন্তর অন্তর নালা কেটে রাখতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যা : বীজ বপনের পর ১০-১২ দিন পর্যন্ত পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। জমিতে ‘জো’ অবস্থায় আগাছা দমনের জন্য নিড়ানী দিতে হবে। চওড়া পাতা বিশিষ্ট আগাছা (বথুয়া ও কাকরি) দমনের জন্য বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে এফিনিটি নামক আগাছানাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম  হারে মিশিয়ে একবার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। সময়মতো আগাছা দমন করলে ফলন শতকরা ১৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
রোগ-বালাই দমন : গমে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। তবে মান সম্পন্ন বীজ উৎপাদনের জন্য কয়েকটি রোগ যেমন- বীজের কালো দাগ রোগ, পাতা ঝলসানো রোগ, মরিচা রোগ, বøাস্ট রোগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
গম ক্ষেতে রোগ নিয়ন্ত্রণে করণীয় : রোগমুক্ত বীজ বপন; উপযুক্ত সময়ে (১ অগ্রহায়ণ - ১৫ অগ্রহায়ন) বীজ বপন; বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজের সাথে ৩ গ্রাম হারে পাউডার ছত্রাকনাশক (কার্বক্সিন ৩৭.৫% + থিরাম ৩৭.৫%) অথবা ৩ মিলি হারে তরল ছত্রাকনাশক (কার্বক্সিন ১৭.৫% + থিরাম ১৭.৫%) মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। বীজ শোধন করলে গমের বীজবাহিত রোগ দমন হবে; গমের প্রধান প্রধান ছত্রাকজনিত রোগ দমনের জন্য প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে ৬ গ্রাম হারে দানাদার ছত্রাকনাশক (টেবুকোনাজল ৫০% + ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রোবিন ২৫%) অথবা ১০ মিলি হারে তরল ছত্রাকনাশক (এজক্সিস্ট্রোবিন ২০% + ডাইফেনোকোনাজল ১২.৫%) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে শীষ বের হওয়ার সময় একবার এবং ১২-১৫ দিন পর আরেকবার ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করলে গমের বøাস্ট রোগসহ পাতা ঝলসানো রোগ, বীজের কালো দাগ রোগ, মরিচা রোগ ইত্যাদি দমন হবে এবং বীজের মান ভাল হবে।
ভিন্ন জাত বাছাইকরণ বা রোগিং : বীজের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য শীষ বের হওয়ার পর থেকে শুরু করে গাছ পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত বীজ ক্ষেতে ২-৩ বার ভিন্ন জাতের মিশ্রণ ও আগাছা গোড়াসহ উপড়ে ফেলতে হবে। বীজ উৎপাদনের জন্য এ কাজগুলো সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে করলে বীজের মান নিশ্চিত হবে।
ফসল কর্তন ও বীজ সংগ্রহ : গম গাছ সম্পূর্ণরূপে পেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করলে কাটার উপযুক্ত হয়েছে বলে গণ্য হবে। তাছাড়া গম পাকার পর বেশি দিন ক্ষেতে থাকলে ঝড়/শিলা বৃষ্টিতে ফসল ও বীজ উভয়েরই যথেষ্ট ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেরি না করে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সকালের দিকে গম কেটে দূপুরে মাড়াই করা উত্তম। মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে গম মাড়াই করলে বীজের মান ভালো থাকে।  
বীজ সংরক্ষণ : কৃষক পর্যায়ে উন্নত পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করা গম চাষের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংরক্ষণের পূর্বে মাড়াইকৃত বীজ পরপর ২-৩ দিন রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে বীজের আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগ বা তার নিচে নামিয়ে নিয়ে আসতে হবে। শুকনা গম দাঁতে চিবানোর সময় ‘কট’ করে শব্দ করে ভেঙে গেলে বুঝতে হবে ওই বীজ সংরক্ষণের উপযুক্ত হয়েছে। সংরক্ষণের পূর্বে ঝেড়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর ১.৭৫-২.৫০ মিমি ছিদ্র বিশিষ্ট চালনি দিয়ে চেলে পুষ্ট বীজ বাছাই করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে পুষ্ট বীজ থেকেই কেবলমাত্র সুস্থ ও সবল চারা উৎপাদন সম্ভব। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে বীজের সুস্থতা ও অংকুরোদগম ক্ষমতা বজায় থাকবে। ফলশ্রæতিতে মাঠে চারার সংখ্যা ও ফলন বেশি হবে।
বীজ সংরক্ষণ পাত্র : ধাতব পাত্র (তেলের ড্রাম, কেরোসিন টিন, বিস্কুটের টিন), প্লাস্টিক ড্রাম বা পলিথিন ব্যাগে বীজ সংরক্ষণ করা উত্তম। পাত্র অবশ্যই ছিদ্রমুক্ত হতে হবে। ভালোভাবে শুকানো পুষ্ট বীজ দ্বারা পাত্র পরিপূর্ণভাবে ভরে ঢাকনাটি শক্তভাবে আটকাতে হবে যাতে বাইরের বাতাস পাত্রের ভেতরে না ঢুকতে পারে। এতে বীজের আর্দ্রতা ঠিক থাকবে এবং রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হবে না। প্লাস্টিক ড্রামে বা পলিথিন ব্যাগে বীজ রাখার ক্ষেত্রে রোদে শুকানো গরম বীজ সংরক্ষণের পূর্বে ছায়ায় ঠাÐা করে নিতে হবে।
বীজ সংরক্ষণে সাবধানতা অবলম্বন : যে পাত্রেই বীজ সংরক্ষণ করা হোক না কেন তা অবশ্যই বীজ দ্বারা পরিপূর্ণ করে রাখতে হবে। সংরক্ষিত বীজভর্তি পাত্র মেঝেতে না রেখে মাচার ওপরে এবং ঘরের দেয়াল/বেড়া থেকে একটু দূরে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজসহ পাত্রগুলো মাটির সংস্পর্শে না আসে।  মাটির সংস্পর্শে এলে বীজের আর্দ্রতা বেড়ে বীজ নষ্ট হয়ে যাবে।
সংরক্ষণের সময়ে পোকার আক্রমণ রোধ করার জন্য ফসটক্সিন ট্যাবলেট বা ন্যাপথালিন বল ব্যবহার করলে ওই বীজ আর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।য়

১বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ২ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ৩সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট, নশিপুর, দিনাজপুর-৫২০০
মোবাইল : ০১৭৯৬৫৮৬০৩৯, ই-মেইল : rezaulw@yahoo.com

মোহাম্মদ রেজাউল কবীর১  মো. আব্দুল হাকিম২ নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা৩


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon